
প্রকাশিত: Sat, Mar 18, 2023 7:41 AM আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 9:17 AM
ডাবের রাজ্য সেন্টমার্টিনে ডাবের সংকট, একটির দাম ২শ টাকা
রাশিদুল ইসলাম, সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরে: ২৫০ বছর আগেআরব বণিকরা দ্বীপটির নাম দিয়েছিল ‘জাজিরা’। আঞ্চলিক ভাষায় স্থানীয়রা বলেন জিঞ্জিরা। আরবদের মধ্যে এক বা একাধিক সাধু ছিলেন যাদের নাম শনাক্ত করা যায়নি। দ্বীপের স্থানীয় নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ যার অর্থ ‘নারকেল দ্বীপ’, কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ভাষায় ‘দারুচিনি দ্বীপ’। দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর সময় দারুচিনি গাছ চোখে পড়েনি। কিংবা হয়ত পড়েছে কিন্তু চিনিনি।
সেই ডাবের রাজ্যে একটি ডাব কমসে কম ২শ টাকা। তাও এটি টেকনাফ, বরিশাল, বাগেরহাট বা খুলনা থেকে আমদানি করা ডাব। অথচ আগে এই দ্বীপ থেকে ডাব যেত বিভিন্ন জেলায়। এক বছর আগেও একটি ডাবের দাম দ্বীপটিতে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। একজনের পক্ষে একটি ডাবের কয়েক গ্লাস পানি খাওয়া সম্ভব হত না। সেই দিন আর নেই। অথচ ডাব ছিল এ দ্বীপের প্রধান অর্থকরী ফসল। ফলে যারা ডাব বিক্রি করে আয় করতেন তাদের মাথায় হাত। ডাবের দাম বেশি বলে বিক্রি কমে গেছে।
দ্বীপের নারকেল গাছগুলোর পাতা বিবর্ণ। বছর দেড়েক হল ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর ডাবগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি কমে যাচ্ছে। কড়া ডাবগুলো ঝড়ে পড়ছে মাটিতে। একটি দোকানে ডাবগুলো এমন বিবর্ণ কেনো জানতে চাইলে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, ছত্রাকের কারণেই এটি হয়েছে তা নিশ্চিত হই টেকনাফ থেকে বেড়াতে আসা দুজন কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে। তারা ডাব গাছে স্প্রে করার কথা বলেছিলেন। দ্বীপে কম করে হলেও হাজার আটেক গাছ আছে। এত গাছে স্প্রে করা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা ভেবেছিলাম গরম হাওয়া বা আবহাওয়া পরিবর্তনে এটি হচ্ছে। ডাবের চাহিদা বেড়েছে এতটাই যে গাছেই একটি ডাব ১২০ টাকা করে দাম হাঁকছে ক্রেতারা। তারপর তা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াইশ টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দ্বীপে শতশত রিসোর্ট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাড়ি ঘর নির্মাণের সময় ডাবগাছ ও শিকড় কেটে ফেলার কারণে গাছের সংখ্যা কমেছে। ঝড়েও অসংখ্য গাছের ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে ডাবগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগও নেই। এমনও বাড়ি ছিল শতাধিক গাছ ছিল। লক্ষাধিক গাছ ছিল দ্বীপটিতে এক দশক আগেও।
ঢাকায় ফিরে হর্টিকালচার উইংয়ের সাবেক পরিচালক ও কৃষিবিদ ড. সাইফুল ইসলামের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে বিদেশি ডাবের চারা আমদানি হলেও সেগুলো সঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইন করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশে ডাবগাছে এমন ব্যাপক ছত্রাকের আক্রমণ এর আগে দেখা যায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বিদেশি চারাগুলো থেকেই এধরনের ছত্রাক ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসের মাধ্যমে দেশি গাছগুলোতে। তবে ডিটারজেন্ট ও ছত্রাক নাশক মিশ্রিত স্প্রে ৭ দিন পরপর ২/৩ বার দেওয়া হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। তা করতে হবে একযোগে কম্বিং অপারেশনের মত। যাতে স্প্রে করার পর ছত্রাকগুলো বাতাসে উড়তে উড়তে আরেক গাছে না চলে যায়। ছোট ডাবগাছ হাতের নাগালে থাকলে টিস্যুপেপার বা কাপড়ে নিমতেল মিশিয়ে পাতাগুলো পরিস্কার করার পর স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা।
কাওরান বাজার ও মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির সংলগ্ন ডাবের আড়তে ডাব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু সেন্টমার্টিন নয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এধরনের ছত্রাকের আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। ডাব ব্যবসায়ী আলামিন জানান তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে ডাব আনেন। সেখানেও দেখেছেন ডাবের একই সমস্যা। খুচরা ডাব বিক্রেতারা জানান, ডাবের ব্যবসায় আগের চেয়ে খরচ বেশি কিন্তু মুনাফা কমেছে। তেল ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় একটি ডাব আনতেই খরচ পড়ে যায় ৬ টাকা। মাঝারি একটি ট্রাকে হাজার খানেক ডাব আনা গেলেও ভাড়া গুনতে হয় ১০ হাজার টাকা। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব